,

ঘুম হারাম এনবিআর কর্মকর্তাদের

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৭৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব না হলেও এ বছরে আশাবাদী তারা। তবে চলতি অর্থবছরে ধার্যকৃত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘুম হারাম এনবিআর কর্মকর্তাদের। দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। কীভাবে অতিরিক্ত এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবেন এ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অনেক কর্মকর্তা এতো বেশি রাজস্ব আহরণ অসম্ভব মনে করলেও দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ কর্মকর্তার চোখে-মুখে দুর্ভাবনার চিহ্ন লেগে থাকলেও সন্তুষ্টির ভাব প্রকাশের চেষ্টা করছেন। জানা যায়, গত ১৪-১৫ অর্থবছর থেকে পরপর তিন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও গত অর্থবছর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা আদায় কম হয়েছে। এনবিআর দাবি করছে, যেকোনো অর্থবছর থেকে গত অর্থবছর রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে, যদিও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কিন্তু গত অর্থবছর সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করার পরও চলতি বছর অতিরিক্ত রাজস্ব ধার্য করাকে অবাস্তব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে। যা জিডিপির তুলনায় ৩০ শতাংশ। প্রকৃত পক্ষে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি, প্রায় ৪০ শতাংশ। বাজেটের এই অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন অবাস্তব। রাজস্ব আদায় বাস্তবায়ন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং সম্ভাবনাময় যেসব খাত ও ব্যক্তি এখনো করের আওতার বাইরে রয়েছে, তাদের কর আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এজন্য ব্যবসায়ী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা চাইবেন তারা। করমেলা আরও গ্রাহকবান্ধব করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। গতবছর নভেম্বরের করমেলায় তরুণদের অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখ করার মতো। এর ধারাবাহিকতায় এবার তরুণ উদ্যোক্তা কিন্তু এখনো করের আওতায় আসেননি, তাদের টার্গেট করে মেলায় বিশেষ আকর্ষণ রাখার চিন্তা-ভাবনা করছে এনবিআর। কি হতে পারে এ বিশেষ আকর্ষণ তা এখনো জানা যায়নি। এবারো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিদের কর আদায়ে সম্পৃক্ততা বাড়ানো। এছাড়া রাজস্ব আদায়ে কঠোর মনিটরিং, নতুন করে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন বা ফিসক্যাল প্রিন্টারসহ পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সফটঅয়্যার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় আলোচনাসভা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাপ্রধানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করা। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহকারী পরিচালক আহসান হাবীব আমার সংবাদকে বলেন, এবারের বাজেটে এনবিআরকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তা অনেক বেশিই বলা যায়। গত অর্থবছরে সবথেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের পরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এরপরও যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তা অনেক বেশিই বলা যায়। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সবাই মিলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এ অবাস্তব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *